রাবি প্রতিনিধি দুর্জয় : দেশে শিক্ষার মান ও উচ্চ পর্যায়ের নিয়োগ কমিটিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউজিসি ও পিএসসিতে সদস্য কমিটিতে কাউকে না নেওয়ার প্রতিবাদে রাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ মানববন্ধন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে আইসিটি সেন্টারের অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “রাবি থেকে পূর্বে ইউজিসি এবং পিএসসিতে নিয়োগ রাখা হতো। কিন্তু এই বছর ২৪-এর গণ-বিপ্লবের পর সরকার এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত ইউজিসি এবং পিএসসিতে একজনকেও নিয়োগ দেয়নি। এই বিষয়টি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য খুবই অবমাননাকর। ইউজিসির ভূমিকা শিক্ষার মান এবং শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেখানে একজনও রাবি থেকে নিয়োগ নেওয়া হয়নি। পিএসসিতেও বিসিএস-সহ বিভিন্ন ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া কর্মকর্তারাও ঢাকা-কেন্দ্রিক থাকার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে।”
ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইয়ামিন হোসেন বলেন, “আমরা জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে চেয়েছি বাংলাদেশের সমস্ত বৈষম্য দূর হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে গবেষকদের তালিকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকের সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। যোগ্য ব্যক্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজ পর্যন্ত ইউজিসি বা পিএসসিতে কোনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এটা আমাদের সাথে বৈষম্য।
রাবি স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজিব বলেন, “আমরা যে আন্দোলনে দাঁড়িয়েছি, এটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও জনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, কিন্তু ঢাকা কেন্দ্রিক বৈষম্য আমাদের সেই স্বপ্নে বাধা সৃষ্টি করছে। ইউজিসি ও পিএসসিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রতিনিধি নেই। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও বৈষম্যমূলক। আমরা দাবি জানাই, ইউজিসিতে অন্তত ১ জন এবং পিএসসিতে অন্তত ২ জন প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগ দিতে হবে।”
মানববন্ধনের সমাপনী বক্তব্যে স্টুডেন্ট রাইটস এসোসিয়েশনের ট্রেজারার অনিক আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশের প্রতিটা আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অসামান্য অবদান রেখেছে। ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে জোহা স্যার দেখিয়ে দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কতটুকু অগ্ৰগামী। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে কখনো যথাযথ সম্মান জানানো হয়নি। বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ইউজিসি ও পিএসসিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো সদস্য নেওয়া হয়নি। যা অত্যন্ত বৈষম্যমূলক আচরণ।”
তিনি আরো বলেন, “২৪ এর গণআন্দোলনের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়কে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব স্টেক হোল্ডার হবে, এটা বাংলাদেশের সাথেই বৈষম্য। এই বৈষম্য যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা ও আশু পদক্ষেপ নিতে হবে।”
মানববন্ধন সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। রাবি থেকে উক্ত কমিটিতে গবেষক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী নেয়ার দাবি পূরণ না করা হলে তারা আগামীতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন বলে সুত্র জানিয়েছে।