14.8 C
Rajshahi
বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫

Buy now

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সমকামীতার অভিযোগ অস্বীকার শিক্ষার্থীর; অভিযোগকারীর বক্তব্যে ধোয়াশা

print news

নিজস্ব প্রতিনিধি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া হলের ১ আবাসিক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বহিরাগত এক নারীর সাথে সমকামীতায় জড়িত থাকার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় অভিযুক্ত ওই ছাত্রীকে গতকাল বিকাল ৪টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় হল প্রশাসন। তবে আনীত অভিযোগ সম্পুর্ণভাবে অস্বীকার করে অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থী বলছেন, প্রথমত তিনি ৪ মাসের গর্ভবতী ও অপর বহিরাগত নারী তাদের পারিবারিকভাবেই পরিচিত এবং একই বাসায় তারা থাকেন, দ্বিতীয়ত ঘটনার সময় তিনি পরীক্ষার হলে ছিলেন, আবাসিক হলে কি হচ্ছে সেবিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। তাই আপত্তিকর অবস্থায় দেখার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। অন্যদিকে হল প্রশাসনের পক্ষে থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগে প্রশাসনের নিকট অভিযোগকারী হিসেবে উল্লেখিত অপর এক শিক্ষার্থী বলছেন তিনি ১ সপ্তাহ যাবত বাড়িতে রয়েছেন এবং অভিযুক্তদের এতদিন শুধু সন্দেহ হয়েছে, নিজ চোখে সে কিছু দেখেনি। ফলে বিষয়টি নিয়ে ধোয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।

সমকামীতার অভিযোগে অভিযুক্তরা হলেন খালেদা জিয়া হলের শিক্ষার্থী মিলি (ছদ্মনাম) এবং বহিরাগত নারী মিমি (ছদ্মনাম)। গতকাল সকালে হলের নতুন ব্লকের তৃতীয় তলায় এই ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে হলের ফ্লোরের শিক্ষার্থীদের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক নোটিশে ওই ছাত্রীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

অপরদিকে, বহিরাগত ওই নারী বেআইনীভাবে হলে থাকে এবং মাঝে মাঝে আবাসিক ওই ছাত্রীর সাথে সমকামীতায় লিপ্ত হয় উল্লেখ করে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়ে সোপর্দ করা হয়।

হল প্রশাসনের নোটিশে বলা হয়, খালেদা জিয়া হলে নতুন ব্লকের আবাসিক ছাত্রী মোছা: মিলি খাতুনের (ছদ্মনাম) কক্ষে বহিরাগত একজন মেয়ে মাঝে মাঝে অবস্থান করে। উক্ত কক্ষের ছাত্রীরা তাদেরকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পায় এবং বিষয়টি হল কর্তৃপক্ষকে অবগত করেন। এমতাবস্থায় হল বড়ির জরুরী সভার সম্মুখে অত্র ফ্লোরের সকল ছাত্রীর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে উক্ত ছাত্রীকে অদ্য ২১ জানুয়ারী বিকাল ৪ টার মধ্যে হল ত্যাগ করতে নির্দেশ দেওয়া হলো এবং বহিরাগত মেয়েকে পুলিশে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হল।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রী মিলি (ছদ্মনাম) বলেন, আমার মানোন্নয়নের পরীক্ষা চলছে, আমি পরীক্ষার হলে ছিলাম। পরীক্ষার হল থেকে শুনেছি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমারই এক ফ্রেন্ড গিয়ে বললো যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব তুই হলে যা, হলে কিছু একটা হয়েছে। তারপর আপনারা যা জানতে পারছেন আমিও তা জানছি। আমি ছিলাম পরীক্ষার হলে, আর গেস্ট ছিলো হলের রুমে। তাহলে কিভাবে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পেলো? আমি প্রভোস্ট স্যারের কাছে প্রমাণ চেয়েছি, স্যার বলেছেন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। আপাতত তুমি হলের বাইরে থাকো।

অপর নারী কে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ও আমার ফ্যামিলি রিলেটিভ পাশাপাশি আমার ফ্রেন্ড হয়। আমি, আমার হাসবেন্ড, আমার ছোটভাই, দেবর, এবং মিমি (ছদ্মনাম) ওর মা সহ আমরা একই বাসায় অবস্থান করি। আমরা তো একই বাসায় থাকি তাহলে অভিযোগকারীদের ভাষ্যমতে যদি আমি আসলেও এরকম কিছুর সাথে জড়িতও থাকি তাহলে আমার বাসা ছেড়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এরকম করার কোন যুক্তি আছে? আমাদের বাসাই ত আমাদের জন্য সেফ। আমার মানসিক অবস্থা ভালো নেই, আমার সংসার আছে। এগুলো এভাবে ছড়ানোয় আমার পরিবারে প্রভাব পরবে। আমি আর কিছু বলতে চাচ্ছিনা। আগামীকাল আমার পরীক্ষা আছে, পরীক্ষার পর আমি হল বডির সাথে এই বিষয়ে কথা বলবো।

অপর অভিযুক্ত মিমি (ছদ্মনাম) বলেন, আমি সকালের দিকে ঘুমিয়েছিলাম। এর মধ্যে রুমের মধ্যে ঢুকে দরজা আটকে হলের মেয়েরা এই অভিযোগ দিয়ে আমাকে এখানে নিয়ে আসে। আমি তাদের বললাম যে এলিগেশনের কথা বলতেছেন কিন্তু কোন প্রমাণ দেখাইলেনও না, শোনালেনও না; ধরে এখানে নিয়ে এসে আসলেন কিন্তু উনারা আমার কোন কথা শোনেনি আমাকে কিছু বলেওনি। তারপর কতবার আসছি, কতদিন ধরে যাতায়াত করি এসব ইনফরমেশন জিগ্যেস করে থানায় নিয়ে এসে অভিভাবকদের ফোন করে দিলো।

এ বিষয়ে হল প্রশাসনের পক্ষে থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগের অন্যতম অভিযোগকারী শ্রাবণী বলেন, আজকে কি হইছে তা ত আমি জানিনা, আমি ১২ তারিখে বাসায় এসেছি। বিষয়টা নিয়ে আমার সন্দেহ হয়েছে শুধু, কিন্তু এমন না যে আমি নিজ চোখে তাদের ওভাবে দেখেছি। আমার কাছে আমাদের বান্ধুবিদের সাথে সম্পর্কের তুলনায় তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা অন্যরকম মনে হয়েছে। সেখান থেকে সন্দেহ হয় যে তাদের মধ্যে এরকম হতে পারে কিন্তু আমার কাছে কোন সলিড প্রমাণ নেই। আর আমি খুব ই ব্যস্ত থাকি, কে কি করলো সেটা দেখার সময় ওতটা নেই বললেই চলে।

বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন বলেন, ওই ছাত্রী পরীক্ষার হলে ছিলো কিনা সেটা আগামীকাল নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে বলতে হবে। তবে বিভাগে পরীক্ষা চলছে এটা সত্য, আমাদের মানোন্নয়ন পরীক্ষা চলছে।

খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দিন বলেন, ১০টার পরপর ছাত্রীরা বিষয়টি আমাকে জানায়। বহিরাগত মেয়েটা এবারেই প্রথম এসেছে তা নয়, ৩/৪ বার এসেছে এবং ৪/৫ দিন করে থাকতো। রুমে তাদের অবস্থান নিয়েও আপত্তি আছে, মেয়েরা আগেও বিভিন্ন সময় তাদের অন্যভাবে দেখেছে। সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরোটাই আই উইটনেস (চাক্ষুস স্বাক্ষী), কোন ভিডিও রেকর্ড নাই। তবে আমরা যখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি তখন তার আচরণ এবং কথাবার্তা সন্দেহজনক ছিলো। থানায় যখন নিয়ে যাওয়া হয় তখন হাউজ টিউটরদের সাথে মেয়েরাও গিয়েছে, তারা স্বাক্ষ্য দিয়েছে।

শ্রাবণী আক্তারের বক্তব্যের সূত্র ধরে জানতে চাইলে প্রভোস্ট বলেন, আপনাদের গণমাধ্যমে সে কি বলেছে সেটা আমি জানিনা কিন্তু হলের মেয়েরা আমাদের সামনে এসে এসব অভিযোগ দিয়েছে। আপত্তিকর অবস্থার বিষয়ে ফ্লোরের মেয়েদের রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে, আমাদের না। মেয়েরা ওই মূহুর্তে দেখেনি কিন্তু কয়েকদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে তারা আজকে স্টেপ নিয়েছে। মেয়েদের হল অনেক সেনসিটিভ জায়গা, কিছু সময় অনেক মেয়েরা এসে কোন দাবী করলে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি সামলাতে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

মেয়েদের স্বাক্ষ্য ব্যতীত অন্য কোন প্রমাণ না থাকা স্বত্তেও ওই শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, একে ত দীর্ঘ সময় সে হলে ছিলো না, একবার সিট বাতিল করার পরেও তাকে মানবিক কারণে সিট দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত সে প্রেগন্যান্ট এবং তৃতীয়ত আজকে উদ্ভূত পরিস্থিতি। এসব কারণে তাকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোন ছাত্রী হলেই প্রেগন্যান্ট মেয়েদের রাখা হয় না। আমরা তার সিট বাতিল করিনি, শুধু বিষয়টি তদন্তের স্বার্থে আপাতত হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সবদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, এই প্রতিবেদকের সাথে হল প্রভোস্টের কথা হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই হলের নোটিশ বোর্ডে লাগানো নোটিশটি তুলে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে হলের একাধিক শিক্ষার্থী।

সম্পর্কিত সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ