24.7 C
Rajshahi
শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

Buy now

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

যোগ্যতার ‘শর্ত পূরণ’ করেই ভাইভায় ডাক পেয়েছেন শিবির সভাপতি, দাবি প্রশাসনের

print news

নিজস্ব প্রতিনিধি : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নিয়োগ পরীক্ষার ভাইবায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মোবারক হোসাইনের ডাক পাওয়া নিয়ে সম্প্রতি দেশজুড়ে হওয়া আলোচনা-সমালোচনার পর নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী আবেদনের যোগ্যতা পূরণ করার কারণেই তাকে ভাইভার জন্য ডাকা হয়েছে।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে প্ল্যানিং কমিটির দ্বান্দ্বিক বক্তব্য পরিহার করে স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গত ৪ ডিসেম্বর ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের প্লানিং কমিটি প্রভাষক পদে ২৮টি আবেদন যাচাই-বাছাই করে ২৬ জন প্রার্থীকে যোগ্য বিবেচনা করে সুপারিশ করেন। সে অনুযায়ী ২৬ জন প্রার্থীর ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে কোনো অসামঞ্জস্যতা না থাকলেও গত ৩১ ডিসেম্বর বিভাগটির প্লানিং কমিটি পুনরায় আরেকটি সভা আহ্বান করে। সেখানে ২৭ নম্বর প্রার্থী মোবারক হোসাইনের সকল যোগ্যতা পূরণ হলেও বিভাগীয় প্লানিং কমিটি তার প্রার্থীতা বাতিল করে প্রশাসনকে চিঠি দেয়। পরে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচার হলে সমালোচনার সৃষ্টি হয় বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে।

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছেন, কোনো কারণ না থাকলেও গত ৩১ ডিসেম্বর ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে প্লানিং কমিটির সভা আহ্বান করা যুক্তিযুক্ত হয়নি।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি শিক্ষক নিয়োগে ইউজিসির নীতিমালা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং ও শর্তের বাইরে গিয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর নতুন করে প্ল্যানিং সুপারিশ পাঠায়। বিভাগ থেকে প্লানিং কমিটি গত ৪ ডিসেম্বর প্রার্থীকে ডাকার সুপারিশ করলেও কোনো কারণ ছাড়া ৩১ ডিসেম্বর নতুন করে না ডাকার সুপারিশ করে। বিষয়টি আমাদেরও বিব্রত করল এবং প্রার্থীকেও বিব্রত করল।

গত অক্টোবর মাসে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ অথবা ন্যূনতম জিপিএ ৪.০০ থাকার শর্ত দেয় কর্তৃপক্ষ। মোবারকের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল ৩ দশমিক ৯০। তিনি ২০০৩ সালে কুমিল্লা বোর্ড থেকে পাস করেন।

তবে ২০০৯ সালের ২ জুন প্রকাশিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালে অর্জিত জিপিএ ৩.৫০ হলে তা প্রথম বিভাগ হিসেবে গণ্য হবে। সে হিসেবে মোবারক উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগ পেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সব শর্তাবলিই পূরণ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভাষ্য, ইউজিসির অভিন্ন নীতিমালা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মোবারক হোসাইনের ডাক পাওয়া বৈধ। এছাড়াও শিক্ষক নিয়োগের অভিন্ন নীতিমালায়ও চাকুরির অভিজ্ঞতা থাকলে শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শিথিল করা যাবে বলে বলা হয়েছে। জানা গেছে শিবিরের সাবেক এই সভাপতি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক পদেও চাকরি করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতিমালার ১০ নম্বর সাধারণ নিয়মাবলীতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে কর্মরত শিক্ষকগণের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শিথিল করা হইয়াছে। এসএসসি হতে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত এই নিয়ম কার্যকর হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার আরও বলেন, বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি প্রথমে ২৬ জনের নাম তারা পাঠায়। পরবর্তীতে তারা ১ জন প্রার্থীর ভুলের কথা বললে তখন আমরা প্রার্থীর যোগ্যতা এনালাইসিস করি প্রশাসন থেকে। সেখানে দেখলাম সে প্রার্থী সকল ক্রাইটেরিয়া পূরণ করেছে এবং সে যোগ্য। তবে প্ল্যানিং কমিটি বিষয়টি ইউজিসির নির্দেশনা, আমাদের বিজ্ঞাপন ও শর্তের বিষয়গুলো বিবেচনায় না এনে উল্টো ৩১ ডিসেম্বর নতুন করে প্ল্যানিং সুপারিশ পাঠিয়ে আমাদেরও বিব্রত করল এবং প্রার্থীকেও বিব্রত করল।

প্লানিং কমিটি প্রথমে সুপারিশ করলে পরে কোনো কারণ ছাড়া ভাইভায় না ডাকার পক্ষে দাঁড়ায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের প্রধান ও প্ল্যানিং কমিটির সভাপতি ড. শেখ মকছেদুর রহমান মুঠোফোনে কথা বলতে রাজি হননি। বিভাগে যাওয়ার কথা বললে আজ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন না বলে জানান।

প্ল্যানিং কমিটির সদস্য মোহাম্মদ মাকসুদুল করিম বলেন, বিভাগ থেকে ভুলের কারণে বিষয়টি জটিল হয়ে গেল। এটি আমাদের জন্য বিব্রতকর। আমরা বিজ্ঞপ্তি অনুসারেই সুপারিশ করে থাকি। সেখানে জিপিএ ৪.০০ এর কথা বলা হয়েছে এবং শর্ত শিথিলের কথা উল্লেখ নাই। আবার অভিন্ন নীতিমালাতে শর্ত শিথিলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১০ এর প্রজ্ঞাপনে ৩ দশমিক ৯০ যেটিকে প্রথম বিভাগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটির বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

এই বিষয়ে মোবারক হোসেন বলেন, নিয়মানুযায়ী আমি প্রথম বিভাগ হিসেবেই আবেদন করেছি। এরপরও কোনো কারণ ছাড়াই বিষয়টি নিয়ে এত সমালোচনা হওয়া আমার জন্য বিব্রতকর।

সম্পর্কিত সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ