রাবি প্রতিনিধি দুর্জয় : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগে ২০২২ সালে শিক্ষক নিয়োগের জন্য সার্কুলার দেওয়া হয়েছিল। এর আগে ও পরে রাবি প্রশাসনের দুর্নীতির অভিযোগে রাবির নিয়োগের উপর কয়েক দফায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ফলে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের নিয়োগ কার্যক্রমটিও স্থগিত ছিল। ২০২৪ সালে নিষেধাজ্ঞাটি প্রত্যাহার করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়।
পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে পুরাতন সার্কুলারে আবেদন না করা সম্ভাব্য চাকরিপ্রার্থীরা ভেবেছিলেন পুনরায় সার্কুলার দিবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে তাদের পাশাপাশি নতুন করে অনেকেই আবেদন করার সুযোগ পেতো। তবে, পুনরায় সার্কুলার না দিয়ে ২০২৫ সালের ৩ মার্চ ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে কয়েকজনকে নিয়োগের সুপারিশ করেছে কর্তৃপক্ষ। যাদের মধ্যে বিতর্কিত প্রার্থীও থাকার শঙ্কা করছেন বঞ্চিত দাবি করা সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
বিতর্কিতরা নিয়োগ পেলে সেটা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি হবে বলে দাবি তাদের। তবে বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, বিভাগে শিক্ষক সংকট রয়েছে। বিভাগের স্বার্থে পুরাতন এই নিয়োগ কার্যক্রমটা দ্রুত সম্পন্ন হওয়া জরুরি। এতে কেউ বঞ্চিত হচ্ছে না। পরবর্তী সার্কুলারে শর্ত পূরণ সাপেক্ষে সবাই আবেদন করতে পারবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থী নিজেদের হতাশার কথা জানান। একজন বলেন, ‘আমি অনার্স এবং মাস্টার্সে আমাদের ফ্যাকাল্টিতে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছিলাম। এছাড়া আমাদের বিভাগের ইতিহাসে আমার মার্কস- ও সবথেকে বেশী বলে আমি মনে করি। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী আমি শিক্ষক হিসেবে আবেদন করতে অযোগ্য। কারণ আমার এসএসসি’র ফলাফল জিপিএ ৪.৫০ এবং এইচএসসি’র ৪.০০। কিন্তু নীতিমালায় ৪.৫০ শর্ত দেওয়া আছে।
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নীতিমালা সংস্কারের জন্য বর্তমান প্রশাসন একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির রিপোর্ট বাস্তবায়নের পরে পুনরায় সার্কুলার দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিলে হয়তো আমার মতো অনেকেই আবেদন করতে পারতেন।
২০২২ সালের সার্কুলারের নিয়োগ বোর্ড ২০২৫ এর মার্চে অনুষ্ঠিত হল। তিনবছর যেহেতু অপেক্ষা করা সম্ভব হয়েছে, সেহেতু নীতিমালা সংস্কার কমিটির রিপোর্ট দেওয়া পর্যন্ত আর কিছুদিন কি অপেক্ষা করা যেতো না? আমি মনে করি দুরভিসন্ধিমূলকভাবে কাজটি করা হয়েছে। বর্তমান নিয়োগ নীতিমালা উপযুক্ত নয় বলেইতো সেটা সংস্কারের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাহলে কেনো তড়িঘড়ি করে এই বোর্ডটি করা হলো?
আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী বলেন, ‘বর্তমান নীতিমালা বিগত সরকারের সময়ে করা হয়েছিল। তাছাড়া, সার্কুলারটাও ২০২২ সালের। ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে আমার মত অনেকেই ধরে নিয়েছিল যে আবেদন করে লাভ নেই।
৫ আগস্টের পরে আমাদের প্রত্যাশা ছিল, নতুন প্রশাসন নীতিমালা সংস্কার করে নতুন একটা সার্কুলারের মাধ্যমে নিয়োগ দিবে। সেটা না করে বর্তমান প্রশাসন গোপনে এবং তড়িঘড়ি করে নিয়োগ বোর্ড সম্পন্ন করেছে। এখন এখানে হয়তো কোনো গোপন ব্যাপার রয়েছে। কারো পছন্দের প্রার্থী থাকতে পারে। এর ফলে আমার মত অনেকেই বঞ্চিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘২০২২ সালের সার্কুলারের নিয়োগ বোর্ড ২০২৫ এ অনুষ্ঠিত হল। এই তিনবছরেওতো অনেক নতুন সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট তৈরী হয়েছে। তারাওতো বঞ্চিত হল। আবার হয়তো সাত-আট বছর পরে সার্কুলার হবে।
তাছাড়া এবারের নিয়োগ বোর্ডে এর আগের উপ-উপাচার্য সুলতানুল ইসলামের পছন্দের কয়েকজনকে সুপারিশ করা হয়েছে বলে আমরা শুনেছি। তাদের কেউ কেউ স্বৈরাচারের দোসর ছিল। ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতি করেছে। তাঁরা নিয়োগ পেলে সেটা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি করা হবে।’
২০২২ সালের সার্কুলারটির রিসার্কুলার করার দরকার ছিলো কিনা জানতে চাইলে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ইউনুস আহমেদ খান বলেন, ‘এখানে কারো ব্যক্তিগত কিছু মনে করায় কোনো যায়-আসে না। আইন সবার জন্য সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ীই নিয়োগ কার্যক্রম চলছে।
রিসার্কুলার হলে নতুন করে আরও অনেকে আবেদন করার সুযোগ পেতো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিগত প্রশাসনের অপারগতার কারণে আমরা এমনিতেই তিনবছর পিছিয়ে গেছি। আমাদেরতো শিক্ষক সংকট সেই ২০২২ সাল থেকেই। নিয়োগ কর্যক্রম দীর্ঘায়িত করে আমরা কেনো আমাদের একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত করবো? এখানে কোনো রাজনীতি নেই। আমাদের বিভাগে আমরা কোনো রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেয় না।
আমরা মেধাবীদের বাছাই করেই নিয়োগের সুপারিশ করেছি। আমাদের আরও শিক্ষক লাগবে। সামনে আমরা আবারও সার্কুলার দিবো। তখন সবাই আবেদন করার সুযোগ পাবে। এখানেতো বঞ্চিত করার কিছু নেই।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘এখানে কেউ বঞ্চিত হচ্ছে না। কারণ সার্কুলার দেওয়া হয়েছিল। তাঁর পরিপ্রেক্ষিতেই নিয়োগ বোর্ড হয়েছে এবং নিয়োগ দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে আবারও সার্কুলার হবে। তখন প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করে যেকেউ চাইলেই আবেদন করতে পারবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সারোয়ার জাহান বিপ্লব কর্তৃক ০২৪৪/০৩, ছোট বনগ্রাম, সপুরা, রাজশাহী-৬২০৩, বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত। মোবাইল নাম্বারঃ +8801712552253, ইমেইল ঠিকানাঃ newsrajshahi24bd@gmail.com
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ নিউজ রাজশাহী টুয়েন্টিফোর।