নিজস্ব প্রতিনিধি : মাত্র দেড়মাসের মাথায় যশোরের চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পায়েল হোসেনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে যশোর পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করা হয়েছে। টর্চার সেল পরিচালনা, ঘুষ ও রিমান্ড বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, নিরীহ মানুষকে হয়রানি এবং নারী কেলেঙ্কারির মতো নানা অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) তাকে চৌগাছা থেকে যশোর পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করা হয়েছে।
যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘পায়েলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এসেছে। বিভিন্ন সমালোচিত কর্মকাণ্ডে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) রুহুল আমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১৭ নভেম্বর পায়েল হোসেন ঢাকার রমনা থানা থেকে বদলি হয়ে চৌগাছা থানার ওসির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। থানায় যোগদানের পর থেকেই টাকার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ৪০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে তিনি ওসির চেয়ারে বসেছেন বলে গুঞ্জন আছে। এ টাকা তুলতেই তিনি মরিয়া হয়ে ওঠেন। প্রথম অভিযানেই তিনি চৌগাছা বাস মালিক সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিনের বাড়ি সারারাত অবরুদ্ধ করে রাখেন। এরপর ওসি ১ কোটি টাকা দাবি করেছিলেন বলে জানান সভাপতি জসিম উদ্দিন। চাঁদা না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে দেওয়া হয় বিভিন্ন মামলা।
উপজেলার ভাদড়া গ্রামের বিএনপি নেতা ব্যবসায়ী মানিক হোসেনকে আটক করে থানায় এনে হাজতে না রেখে নিজ বাংলোর একটি কক্ষে আটকে রেখে গোপনাঙ্গে ইলেকট্রিক শক ও শারীরিক নির্যাতন করতে থাকেন। ফোন করে মানিকের স্ত্রীর তোহরা খাতুনের কাছে শুধু মারধোর বন্ধ করতে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন এবং সেটা আদায়ও করেন। পরে অস্ত্র মামলা ও রিমান্ড আবেদন করে তাকে আদালতে সোপর্দ করেন।
মাসিলা গ্রামের পারভেজ আহমেদ সোহাগ নামে এক যুবককে তুলে এনে দুই লক্ষ টাকা দাবি করে ৩২ ঘণ্টা তার টর্চার সেলে আটকে রেখে ইলেকট্রিক শক ও শারীরিক নির্যাতন চালান এবং ফোন করে তার মাকে আহাজারি শোনান। সোহাগের মা দেড় লাখ টাকা দিতে রাজি হলেও প্রত্যাশিত টাকা না পাওয়ায় তাকে ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের বিভিন্ন সময়ের মামলায় আসামি দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড আবেদন করেন।
গত এক সপ্তাহে এ দুটি লোমহর্ষক ঘটনা এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। অনেক পরিবারের পুরুষেরা ইতোমধ্যে রাতে বাড়ি ছেড়ে অন্যখানে রাত্রিযাপন করছেন। এর আগে ২৩ নভেম্বর সিংহঝুলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হামিদ মল্লিককে গ্রেপ্তার করে ঐ টর্চার সেলে ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাকে ২০১৯ সালের একটি চাঁদাবাজির মামলায় আদালতে পাঠানো হয়।
চৌগাছা বাজারের আরেক ব্যবসায়ী জীবন হোসেন লিপু গত ১৭ ডিসেম্বর তার বন্ধু বাবুলের ছোটভাই হারিয়ে গেলে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। দুদিন পর ওসি বাবুলকে ডেকে বলেন, তাকে নরসিংদিতে পাওয়া গেছে। ওখান থেকে আনতে হলে এডিশনাল এসপিকে টাকা দিতে হবে, বিভিন্ন খরচ আছে বলে দুই লক্ষ টাকা দাবি করেন। নিরুপায় হয়ে বাবুল গরু বিক্রি করে ৪০ হাজার টাকা ও তার বন্ধু জীবন হোসেন লিপুর কাছে থেকে ১০ হাজার টাকাসহ মোট ৫০ হাজার টাকা ওসির হাতে তুলে দেন।
পরদিন তাদের স্বজনরাই হারানো ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে সমর্থ হলে ওসির কাছে টাকা ফেরত চান তারা। এ সময় ওসি তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে তারা এসপির কাছে অভিযোগ করার কথা জানান। এতে ওসি আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ‘দালাল হইতে সাবধান’ লিখে বাবুল ও জীবনের ছবি ও ফোন নম্বর সম্বলিত পোস্টার থানার দেয়াল ও প্রাচীরে সেঁটে দেন। এরপর মুঠোফোনে জীবনকে গুলি করার হুমকিসহ নানা ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন। বাধ্য হয়ে জীবন এবং বাবুল প্রাণভয়ে চৌগাছা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জীবন বলেন, ওসি আমার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন। আমি একলাখ টাকা দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে তিনি আরও একলাখ টাকার জন্য আমাকে বিশ্রী ভাষায় গালমন্দ করে হুমকি দিতে থাকেন।
সবশেষ শনিবার রাতে ৫ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ওসি পায়েল কখনও অন্য একটি মোবাইলে কথা বলছেন, আবার কখনও হাসতে হাসতে অপরপ্রান্তে থাকা এক নারীকে বিভিন্নভাবে অশালীন ইঙ্গিত দিচ্ছেন। একপর্যায়ে নিজের পুরো শরীর প্রদর্শন করতেও দেখা যায় তাকে।
অভিযোগের বিষয়ে ওসি পায়েল বলেন, ‘আমাকে ট্র্যাপে ফেলা হয়েছে। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।’
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সারোয়ার জাহান বিপ্লব কর্তৃক ০২৪৪/০৩, ছোট বনগ্রাম, সপুরা, রাজশাহী-৬২০৩, বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত। মোবাইল নাম্বারঃ +8801712552253, ইমেইল ঠিকানাঃ newsrajshahi24bd@gmail.com
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ নিউজ রাজশাহী টুয়েন্টিফোর।