32.7 C
Rajshahi
সোমবার, মার্চ ১০, ২০২৫

Buy now

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

চাকরির নামে কোটি টাকা হাতিয়ে পাল্টা হয়রানির অভিযোগ দম্পতির বিরুদ্ধে

print news

নিউজ রাজশাহী ডেস্ক : রাজশাহীতে চাকরি দেওয়ার নামে কোটি টাকা হাতিয়ে পাল্টা মিথ্যা মামলায় হয়রানির প্রতিবাদে ভূয়া মেজর ও ম্যাজিস্ট্রেট দম্পতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভূক্তোভোগীরা।

শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে মহানগরীর কল্পনা হল মোড়ের একটি সেমিনার কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন ভূক্তভোগী রোমান ইসলাম। এসময় শেখ আব্দুল্লাহ, জাহিদ উল আলম, আব্দুস সালাম, সীমান্ত রহমান, ও ভূক্তভোগী পরিবারবর্গ।

সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করেন, আমরা প্রায় ১৫-২০ টি পরিবার চাকরি দেওয়ার নামে প্রলোভন দেখিয়ে একটি প্রতারক চক্রের পাল্লায় পড়ে চাকরি নামক সোনার হরিণ পাবার আশায় প্রায় ২ কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হারিয়ে পথে বসেছি। রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার আরডিএ মার্কেট দ্বিতীয় তলায় সাইফ এন্টার প্রাইজ নামক দোকানে প্রতারকের সহযোগিতা শাহীন রেজা, পলাশ রাঙ্গা ও আলমগীরের মাধ্যমে নওগাঁ জেলার ধামরহাট থানার লোদিপুর গ্রামের মৃত. মোজহারুল চেধুরীর মেয়ে মুক্তাপারভীন নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেয়। এবং তার স্বামী রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ থানার পশ্চিম উজানচর, পশ্চিমবালিয়াডাঙ্গি গ্রামের মো: মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে মো: তৌহিদুল ইসলাম শুভকে ডিজিএফ আয়ের মেজর পরিচয় করিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েসহ বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়ার কথা জানান।

রাজশাহী মহানগরীর আরো তিনজন তাদের সহযোগি তারা হলেন মতিহার থানার ডাঁশমারি এলাকার মৃত হাসেম আলীর ছেলে মো: শাহীন রেজা, একই এলাকার আল-হামদুর ছেলে মো: আলমগীর হোসেন এবং মো: মহসিনের ছেলে পলাশ রাঙ্গা আমাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে এবং তাদেরকে বিশ্বাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চাকরি দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে আমাদের সাথে ঘনিষ্টতা বাড়ায়। চাকরি দেওয়ার বিশ্বাস অর্জন করাতে তৌহিদুল ইসলাম শুভ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পোশাক পরিধানকৃত ছবি, আইডি কার্ড ও ভিজিটিং কার্ড দেখায়। এছাড়াও চাকরি না হলে টাকা ফেরতের নিশ্চয়তার জন্য ভূয়া মেজর পরিচনদানকারী মো: তৌহিদুল ইসলাম শুভ ফাঁকা স্ট্যাপ ও ব্যাংক চেক আমাদের প্রদান করেন। অধিকরত বিশ্বাসের জন্য ভূয়া মেজর তৌহিদুল ইসলাম শুভ পবিত্র কোরআন শরীফের উপর হাত রেখে কসম দেয়।

তারা আরো জানান, গত ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস হতে নভেম্বর মাস পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে আমরা ভূক্তভোগী পরিবার ব্যাংক, বিকাশের মাধ্যমে ও নগদ অর্থ প্রদান করি।

এক পর্যায়ে তারা আমাদের রেলওয়ের বিভিন্ন দপ্তরে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কম্পিউটার অপারেটর, সহকারি হিসাব রক্ষকসহ বিভিন্ন পদে পরীক্ষা দিতে হবে বলে ভূয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে আবেদন করতে বলে। আমরা আবেদন করলে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ঢাকা রেলভবনের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে সেখানকার কর্মকর্তাদের যোগসাজসে মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য হাজির হই। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর আমাদের জানান, পরীক্ষা দিলে ফেল হওয়ার সম্ভবনা আছে বলে ভূয়া মেজর পরিচয়দানকারী মো: তৌহিদুল ইসলাম শুভ মনের মধ্য ভয় ঢুকিয়ে দেয়। পরে আমরা পরীক্ষা না দিয়ে রেলভবনের দ্বিতীয়তলা হতে ফেরত আসি। এর পরে আমাদের ভূয়া ফরম, অনলাইন রেজাল্ট শীট, নিয়োগপত্র তৈরী, ট্রেনিং এর চিঠি তৈরী করে আমাদের নিকট ডাকযোগে পাঠায়। আমাদের চাকরি হয়ে গেছে এই আনন্দে লালমনিরহাট, রাজশাহী, ঢাকা রেলভবন, পাকশি রেলভবনসহ বিভিন্ন জায়গায় যোগদান করে চাকরী করতে থাকি। এক পর্যায়ে আমরা বুঝতে পারি আমাদের কাজ নাই মজুরী নাই (মাস্টার রোল) ভিত্তিতে কাজ করিয়ে নিচ্ছে। পরে আমরা আরো বুঝতে পারি এরা আমাদের সাথে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এক পর্যায়ে আমরা ওই কাজ ছেড়ে দিয়ে বাসায় চলে আসতে বাধ্য হই।

প্রতারক দম্পতির এমন কৌশলে পরাস্থ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তা ভাবনা করি। গত ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর মহানগরীর বোয়ালিয়া থানায় প্রতারণা মামলা যার নং ১৫/৪৪৫ ও ২০২৪ সালে ৩ মার্চ একই থানায় প্রতারণা মামলা যার নং ৩/১১২ করা হয়। এই দুটি মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দানকারী মুক্তা পারভিন ও তার স্বামী ডিজিএফ আয়ের মেজর পরিচয়দানকরী মো: তৌহিদুল ইসলাম শুভ, শুভর পিতা মোয়াজ্জেম হোসেন নিজেকে ব্রিগেডিয়ার পরিচয়দানকরী (বিজিবিতে কর্মরত) এবং তাদের সহযোগিদের নামে মামলা দায়ের করি।

IMG 20250308 171256

মামলা দায়ের করার পর মুক্তাপারভিন এবং রাজশাহী মহানগরীর তিনজন সহযোগী পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে যায়। মেজর পরিচয়দানকরী মো: তৌহিদুল ইসলাম শুভ, শুভর পিতা মোয়াজ্জেম হোসেন কে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তারা জামিনে বের হয়ে আসার পর আমাদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সহযোগি শাহীন রেজার চাচাতো ভাই মিজানুর রহমানের মোবাইল নং ব্যবহার করে মতিহার থানার খোজাপুর এলাকার মো: কায়সার হামিদ লিটনের ছেলে মো: আজিজুর রহমান বাদি হয়ে গত ২০২৪ সালের ৪ ও ৫ আগস্টের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনে আমাদেরকে সেই দিনে আওয়ামী লীগের আন্দোলনে যোগদান করেছি এমন ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে আসামী করে গত ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে মতিহার থানায় ভূয়া মামলা করে। যা আমরা আদৌতে কোন দলের রাজনীতির সাথে য্ক্তু নেই।

তারা আমাদের হেনস্থা ও হয়রানী করার একমাত্র উদ্দেশ্য নিয়ে পরে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়দানকরী মুক্তা পারভিন নিজে বাদী হয়ে ফরিদপুর জেলার রাজবাড়ী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করে (মামলা মিস.পি ৩০/২৫)। মামলার আর্জিতে তাকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। আমাদের দায়েরকৃত মামলায় র‌্যাব-১০ রাজবাড়ী কোর্ট এলাকা হতে মুক্তা পারভীনকে আটক করে। পরে র‌্যাব-১০ ফরিদপুর ক্যাম্প হেফাজতে থাকা অবস্থায় বোয়ালিয়া থানা পুলিশের এসআই মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে তাকে আমাদের দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করে। ম্ক্তুাপারভিন ওই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ভূক্তভোগী আরো ৪ জনের নামে ভূয়া মামলা দায়ের করে। এভাবে আমাদের দিনের পর দিন হয়রানি করে যাচ্ছে। টাকা পাওয়ার জন্য এবং এসব ঝামেলার সমঝোতা করার জন্য তাদের সাথে বহুবার মোবাইল ফোনসহ লোকমারফত যোগাযোগ করা হলেও কোন সাড়া না দিয়ে আমদের বিরাট অংকের আর্থিক ক্ষতিসহ হয়রানি করে যাচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্থ ভূক্তভোগী পরিবারদের দাবি এসব প্রতারকদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে সর্বোচ্চ শাস্তির এবং আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি বন্ধের দাবি জানান। এছাড়াও এসব প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে যাতে আর কোন পরিবার নি:স্ব না হয় এজন্য আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীসহ বর্তমান অন্তর্রবর্তি সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ