রাজশাহীতে একটি অভিযোগ তদন্তে গিয়ে পুলিশ কনস্টেবলের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিভাগীয় মামলাখেয়েছেন উপপরিদর্শক (এসআই)। এই মামলা হওয়ার পর থেকে ওই এসআই নানাভাবে পুলিশ কনস্টেবলকে হয়রানি করছেনবলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তার নাম আবদুর রউফ। এর আগে তিনি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) বোয়ালিয়া ও মতিহার থানায় ছিলেন।ওই সময় পরকীয়ায় জড়ান তিনি। বর্তমানে তিনি আছেন সাতক্ষীরার কলারোয়া থানায়। আর ভুক্তভোগী কনস্টেবল আছেনপাবনার ঈশ্বরদীর একটি পুলিশ ফাঁড়িতে। তার বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুরে। তবে স্ত্রী থাকেন রাজশাহী শহরে।
স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া দেখে ওই কনস্টেবল গত বছর আরএমপির কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। আরএমপির সাইবারক্রাইম ইউনিট এ অভিযোগের তদন্ত করে। ১২৭ পাতার তদন্ত প্রতিবেদনে ওই পুলিশ কনস্টেবলের অভিযোগের সত্যতা মেলে। এনিয়ে অভিযুক্ত এসআইয়ের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। আরএমপির বিভাগীয় মামলা নম্বর- ২৮/২০২৪। পরে আরএমপিরট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম মামলার তদন্ত করে সম্প্রতি প্রতিবেদন দেন।
ওই পুলিশ কনস্টেবল অভিযোগে উল্লেখ করেছিলেন, তার ছেলে রাজশাহীর একটি স্কুলে পড়াশোনা করে। তাই তার স্ত্রী নগরেরসাধুর মোড় এলাকায় নিজের বাবার বাড়িতেই থাকেন। পরবর্তীতে বাড়ির অংশ নিয়ে বোনদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে একশ্যালিকা নগরের বোয়ালিয়া থানায় অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পান থানার তৎকালীন এসআই আবদুররউফ। বিরোধ নিষ্পত্তির কথা বলে এসআই আবদুর রউফ তার স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে ওইএসআই নিচতলার একটি ঘর দখল করে ভাড়াটিয়া হিসেবে সেখানে থাকতে শুরু করেন।
কনস্টেবল অভিযোগে উল্লেখ করেন, একদিন তিনি পাবনা থেকে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখতে পান, তার স্ত্রীর সঙ্গে ডাইনিংয়ে বসেখাচ্ছেন ওই এসআই। তিনি সেদিন তার পরিচয় জানতে পারেন। স্ত্রীর কাছে তিনি জানতে পারেন, অভিযোগ তদন্ত করতে এসেতার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে এবং এরপর ওই এসআই তার শ্বশুরবাড়িতেই একটি ঘর ভাড়া নিয়ে উঠেছেন। তিনি একা থাকেন।রান্নার সমস্যা বলে ওই এসআই তার স্ত্রীর সঙ্গে খান।
ওই কনস্টেবল লক্ষ্য করেন, তিনি যখন ছুটিতে শ্বশুরবাড়ি যান তখন ওই এসআই বাড়িতে আসেন না। একদিন গভীর রাতে তারস্ত্রী যখন ঘুমাচ্ছিলেন, তখন তাকে ম্যাসেঞ্জারে বার্তা পাঠান ওই এসআই। ওই কনস্টেবল ম্যাসেঞ্জারে কথোপকথনে দেখেন, দুজনের একসঙ্গে তোলা ছবি এবং কুরুচিপূর্ণ বার্তা আদান-প্রদান হয়েছে। তার স্ত্রীর সঙ্গে ওই এসআইয়ের পরকীয়া প্রেমেরসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ওই রাতেই তিনি এসআইয়ের সঙ্গে মোবাইলে উচ্চ্যবাচ্য করেন। তার স্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, তার ভুল হয়েগেছে। তিনি আর এসআইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন না। কিন্তু সম্পর্ক ঠিকই চালিয়ে গেছেন।
ওই কনস্টেবল অভিযোগে উল্লেখ করেন, পাবনার একটি থানায় থাকা অবস্থায় গতবছর তার স্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে তিনি মোবাইলেকথা বলছিলেন। সেদিন তার স্ত্রী তাকে জানান, ওই এসআইয়ের কাছে তাদের দুজনের মেলামেশার ভিডিও আছে। সেটি দিয়েতিনি তার স্ত্রীকে জিম্মি করে রেখেছেন। ফলে তার স্ত্রী না চাইলেও এসআইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এ কথা শোনারপর থানার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তখন দুজন কনস্টেবল তাকে ধরে ফেলেন এবং থানার ভারপ্রাপ্তকর্মকর্তার (ওসি) কাছে নিয়ে যান। ওসি সবকিছু শুনে তাকে সংশ্লিষ্ট সার্কেল এএসপির কাছে নিয়ে যান। ওই এএসপি সব শুনেতাকে আরএমপির পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। এরপর তিনি এই লিখিত অভিযোগ করেন।
ওই কনস্টেবল অভিযোগ করে জানান, এসআই আবদুর রউফ এখন তার স্ত্রীকেই কনস্টেবলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিচ্ছেননা। এসআইয়ের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হওয়ার পর তিনি ওই কনস্টেবলের স্ত্রীকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জেরউপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) কাছে একটি অভিযোগ করিয়েছেন। এছাড়া আদালতে যৌতুকের একটি মিথ্যা মামলা করানোহয়েছে বলেও ওই কনস্টেবল দাবি করেন।
ভুক্তভোগী পুলিশ কনস্টেবল বলেন, ‘এসআই আবদুর রউফ আমার সংসারে আগুন লাগিয়েছে। সে আমার স্ত্রীকেই যোগাযোগকরতে দেয় না। আমার স্ত্রীর সঙ্গে তার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক পুলিশি তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। বিভাগীয় মামলা হওয়ার পরে সেআমার স্ত্রীকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা করিয়েছে, যাতে আমার চাকরি না থাকে। এসব কারণে আমি দুইদফা স্ট্রোককরেছি। মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশের ঢালাও বদলির সময় এসআই আবদুর রউফ রাজশাহীথেকে সাতক্ষীরার কলারোয়া থানায় বদলি হয়ে গেছেন। বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথমে দাবি করেন, ওই কনস্টেবলএবং তার স্ত্রীকে তিনি চেনেনই না। কনস্টেবলের শ্বশুরবাড়ির একটি ঘরে বসবাসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পরে বলেন, ‘আমি ভাড়া উঠেছিলাম। তবে তার সঙ্গে আমার পরকীয়া নেই।’
এসআই রউফ এ সময় তার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের প্রমাণ দেখতে চান। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপে কনস্টেবলের লিখিতঅভিযোগ ও তার বিরুদ্ধে হওয়া বিভাগীয় মামলার কপি, কনস্টেবলের স্ত্রীর সঙ্গে ছবি ও ম্যাসেঞ্জারে কথোপকথনের স্ক্রিনশটপাঠানো হয়। এরপর ফোন করলে তিনি আর ধরেননি। আর এসআই রউফের কথায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করার অভিযোগেরবিষয়ে জানতে চাইলে কনস্টেবলের স্ত্রী মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এসআই রউফের বিরুদ্ধে হওয়া বিভাগীয় মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চাইলে আরএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশকমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিভাগীয় মামলা অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে। এ ব্যাপারে মিডিয়ার সঙ্গেকথা বলার নিয়ম নেই।’
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সারোয়ার জাহান বিপ্লব কর্তৃক ০২৪৪/০৩, ছোট বনগ্রাম, সপুরা, রাজশাহী-৬২০৩, বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত। মোবাইল নাম্বারঃ +8801712552253, ইমেইল ঠিকানাঃ newsrajshahi24bd@gmail.com
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ নিউজ রাজশাহী টুয়েন্টিফোর।